Sahaj Path Interview Preparation Guide: পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত “সহজ পাঠ” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বইটির পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান একজন প্রার্থীর প্রস্তুতিকে অনেকাংশে এগিয়ে রাখতে পারে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য, সহজ পাঠ সম্পর্কিত সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য একটি সুসংগঠিত আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
সহজ পাঠ: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সহজ পাঠ আসলে চারটি খণ্ডে বিভক্ত। তবে প্রাইমারি ইন্টারভিউ এবং প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠনের জন্য প্রথম দুটি খণ্ডই প্রাসঙ্গিক।
- প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ: এই দুটি খণ্ডের রচয়িতা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এগুলি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগ: এই খণ্ড দুটি মূলত সংকলন গ্রন্থ, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও অন্যান্য লেখকের রচনাও স্থান পেয়েছে।
প্রকাশনা ও অলঙ্করণ সংক্রান্ত তথ্য
যেকোনো বইয়ের আলোচনায় তার প্রকাশনার ইতিহাস ও শৈল্পিক দিকটি জানা আবশ্যক।
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| প্রথম প্রকাশকাল | বৈশাখ, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (মে, ১৯৩০ সাল) |
| প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ শিল্পী | নন্দলাল বসু |
| অঙ্কন রীতি | লিনোকাট (Linocut) |
| লেখার ক্রম | বর্ণ ➔ শব্দ ➔ বাক্য |
| বিদ্যালয়ে ব্যবহার শুরু | ১৯৬৮ সাল থেকে |
| কপিরাইট মুক্তি | ২০০১ সাল |
নন্দলাল বসুর চিত্রশৈলীর বিশেষত্ব
সহজ পাঠের ছবিগুলি নিছক অলঙ্করণ নয়, এগুলি পাঠ্য বিষয়েরই অংশ। শিল্পী নন্দলাল বসুর অঙ্কন শৈলীর কিছু বিশেষত্ব রয়েছে:
- প্রথম ভাগের ছবি: এগুলি “মোটা দাগে” আঁকা, যা শিশুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
- দ্বিতীয় ভাগের ছবি: এগুলি “রেখাচিত্র” (Line drawing) শৈলীতে আঁকা। এই ছবিগুলির মাঝে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে, যাতে শিশুরা নিজেদের মতো রং করতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
“সহজ পাঠ” নামকরণের সার্থকতা
বইটির নাম “সহজ পাঠ” হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
- শিশুদের জন্য: শিশুরা এই বইয়ের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজে বাংলা ভাষার গঠন, উচ্চারণ ও রসবোধের সাথে পরিচিত হতে পারে।
- শিক্ষকদের জন্য: শিক্ষকরাও এই বইয়ের সাহায্যে শিশুদের সাথে ভাষার একটি সহজ ও আনন্দদায়ক সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারেন।
খণ্ডভিত্তিক বৈশিষ্ট্য
সহজ পাঠ: প্রথম ভাগ
- বর্ণমালার ধারণা: ‘অ’, ‘আ’ দিয়ে বাংলা বর্ণমালার প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে।
- সরল ভাষার ব্যবহার: শিশুদের উচ্চারণের কথা মাথায় রেখে এখানে কোনো যুক্তব্যঞ্জন বা যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা হয়নি।
- ছন্দের ব্যবহার: বিভিন্ন ছড়ার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ছান্দিক বোধ জাগিয়ে তোলা হয়েছে এবং পাঠে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে।
- প্রকৃতি-কেন্দ্রিকতা: পাঠ্য বিষয়গুলি শিশুর চারপাশের চেনা পরিবেশ ও প্রকৃতি থেকে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
সহজ পাঠ: দ্বিতীয় ভাগ
এই ভাগে ভাষা ও বিষয়বস্তু সহজ থেকে জটিলের দিকে এগিয়েছে।
- বাক্য ও অনুচ্ছেদ: শব্দের পরিবর্তে বাক্য এবং অনুচ্ছেদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
- যুক্তাক্ষরের ধারণা: এই খণ্ডেই প্রথম যুক্তাক্ষরের ধারণা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে দুটি বর্ণ (যেমন: ক্ক, চ্চ) এবং পরে তিনটি বর্ণ যুক্ত করে যুক্তাক্ষর শেখানো হয়েছে।
- ভাষার রসবোধ: বড় বাক্য ও অনুচ্ছেদ পাঠের মাধ্যমে শিশুরা ভাষার গভীর রস উপলব্ধি করতে শেখে।
বর্ণমালা সংক্রান্ত কিছু তথ্য
সহজ পাঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা বর্ণমালাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেছেন।
- স্বরবর্ণ: ১১টি
- ব্যঞ্জনবর্ণ: ৩৩টি
প্রশ্ন আসতেই পারে, ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা কম কেন? কারণ, রবীন্দ্রনাথ ং (অনুস্বার), ঁ (চন্দ্রবিন্দু), এবং ৎ (খণ্ডত)-কে স্বতন্ত্র ব্যঞ্জনবর্ণ হিসেবে গণ্য করেননি। তাঁর মতে, এগুলি হলো “উচ্চারণের প্রতীক”, যা নিজে ধ্বনি তৈরি না করে অন্য ধ্বনির উচ্চারণকে প্রভাবিত করে।
ইন্টারভিউয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছড়া ও কবিতা
ইন্টারভিউতে সহজ পাঠ থেকে ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করতে বলা হতে পারে।
- প্রথম ভাগের প্রথম ছড়া: “বনে থাকে বাঘ। গাছে থাকে পাখি। জলে থাকে মাছ।…”
- প্রথম ভাগের শেষ ছড়া: “কতদিন ভাবে ফুল উড়ে যাব কবে। যেথা খুশি সেথা যাব ভারী মজা হবে।…”
- দ্বিতীয় ভাগের প্রথম কবিতা (হাট): “কুমরপাড়ার গরুর গাড়ি। বোঝাই করা কলসিহাঁড়ি।…” (এটি সহজ পাঠের একমাত্র নামকরণ করা কবিতা)
- দ্বিতীয় ভাগের শেষ কবিতা: “অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনী গায়। পোড়া মন্দিরখানা গঞ্জের পায়ে।…”
সম্ভাব্য ইন্টারভিউ প্রশ্ন
- “চল ভাই নিলু এই তালবন দিয়ে পথ” – এই লাইনে নিলু কোন পথ দিয়ে যাবে? (লাইন তুলে প্রশ্ন)
- সহজ পাঠের মাধ্যমে আপনি শিশুদের যুক্তাক্ষরের ধারণা কীভাবে দেবেন? (Teaching Demonstration)
- ছড়ায় তিনটি শালিকের কথা থাকলেও ছবিতে দুটি কেন?
- ‘কী’ (কয় দীর্ঘই) এবং ‘কি’ (কয় হ্রস্বই) এর ব্যবহার কেন আলাদা?
