Cyclone Montha General Knowledge: ঘূর্ণিঝড় মোন্থা (Cyclone Montha) সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। ২০২৫ সালের অক্টোবরে এটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে, যার ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত, শক্তিশালী বাতাস এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত তথ্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘূর্ণিঝড় মোন্থা (Cyclone Montha)
ঘূর্ণিঝড় মোন্থা ২০২৫ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয় এবং পরবর্তীকালে একটি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে (Severe Cyclonic Storm) পরিণত হয়। এটি ভারতের পূর্ব উপকূলে, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশে, ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
উৎপত্তি ও গঠন
মোনথার উৎপত্তি হয় ২০২৫ সালের ২৪শে অক্টোবর নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসাবে। ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল পরিবেশ, যেমন ২৭-২৮°C এর বেশি সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, কম উল্লম্ব বায়ু শিয়ার (low vertical wind shear) এবং বাতাসে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে এটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে। ২৮শে অক্টোবরের মধ্যে এটি একটি নিম্নচাপ থেকে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ ও অগভীর জল এবং এর ভৌগোলিক অবস্থান ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
নামকরণ ও অর্থ
ঘূর্ণিঝড়টির “মোনথা” নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization – WMO) উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য যে নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে, সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে এই নামটি বেছে নেওয়া হয়েছে। থাই ভাষায় “মোনথা” শব্দের অর্থ হলো “সুগন্ধি ফুল” বা “সুন্দর ফুল”। ঘূর্ণিঝড়ের এমন নামকরণ সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছাতে, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে এবং একই সময়ে একাধিক ঝড় হলে বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
প্রভাব ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
ঘূর্ণিঝড় মোনথার প্রভাবে উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং অভ্যন্তরীণ রায়লসীমা অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল এবং ঝড়ের প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে সমুদ্রের ঢেউ প্রায় ৪.৭ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়েছিল।
প্রধান প্রভাবিত জেলা:
- কাকিনাডা
- কোনাসীমা
- পশ্চিম গোদাবরী
- কৃষ্ণা
- নেল্লোর
এই জেলাগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল এবং ঝুঁকি কমাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, পরিবহন ব্যবস্থা (ট্রেন ও বিমান) স্থগিত হওয়া এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রায় ৯০০-র বেশি মাছ ধরার নৌকাকে সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং গর্ভবতী মহিলা ও বয়স্কদের মতো দুর্বল মানুষদের জন্য ত্রাণ শিবির প্রস্তুত করা হয়েছিল।
পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Key Facts for Exams)
- মোনথা হলো ২০২৫ সালে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়া প্রথম বড় ঘূর্ণিঝড়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি তুলে ধরে।
- এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভারতের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
- এটি উপকূলীয় অঞ্চলের জনসংখ্যা, কৃষি, এবং মৎস্যজীবীদের দুর্বলতা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির গুরুত্বকে নির্দেশ করে।
এক নজরে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি নিচের সারণিতে দেওয়া হলো:
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| গঠনের তারিখ | অক্টোবর ২০২৫ (২৪-২৮ অক্টোবর) |
| নামকরণের উৎস | থাইল্যান্ড (“মোনথা” = সুগন্ধি/সুন্দর ফুল) |
| স্থলভাগে আছড়ে পড়ার স্থান | অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল (কাকিনাডার কাছে) |
| সর্বোচ্চ বায়ুর গতিবেগ | ঘন্টায় ১০০-১১০ কিমি পর্যন্ত |
| সতর্ককারী সংস্থা | IMD, NDRF, ভারতীয় সেনা, উপকূলরক্ষী বাহিনী |
| প্রভাবিত রাজ্য | অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, কেরালা, ছত্তিশগড় |
| প্রভাবের ক্ষেত্র | উপকূলীয় বন্যা, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, ফসল ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি, ট্রেন ও বিমান চলাচল ব্যাহত |
