PM POSHAN Scheme Explained: যেকোনো শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ, তা সে প্রাইমারি হোক বা SLST, একটি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসবেই – সেটি হলো মিড-ডে-মিল প্রকল্প। ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টি ও শিক্ষার প্রসারে এই প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে যাওয়ার আগে এই প্রকল্পটি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ এবং বিস্তারিত ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আমরা মিড-ডে-মিল প্রকল্পের ইতিহাস থেকে বর্তমান রূপ পর্যন্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজভাবে আলোচনা করব।
মিড-ডে-মিল (Mid-Day Meal) প্রকল্প কী?
সহজ কথায়, ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির যৌথ উদ্যোগে দেশের সরকারি ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টির মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনামূল্যে রান্না করা খাবার সরবরাহ করার কর্মসূচিই হলো মিড-ডে-মিল। বর্তমানে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘পিএম পোষণ’ (PM POSHAN) হয়েছে। ইন্টারভিউতে উত্তর দেওয়ার সময় এই বিষয়টি উল্লেখ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রকল্পের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বিবর্তন
মিড-ডে-মিল প্রকল্পটি একদিনে আজকের রূপে আসেনি। বিভিন্ন সময়ে নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এর বিবর্তন ঘটেছে।
১. তামিলনাড়ুতে প্রথম সূচনা (১৯৫৫)
স্বাধীন ভারতে এই ধরনের প্রকল্পের সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ পাওয়া যায় তামিলনাড়ুতে। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী কামরাজ চেন্নাইয়ের সৌরাষ্ট্র বালক বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সমগ্র তামিলনাড়ু জুড়ে শিশুদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এই কারণেই কুমারস্বামী কামরাজকে ‘মিড-ডে-মিলের জনক’ বলা হয়।
২. জাতীয় স্তরে সূচনা (১৯৯৫)
জাতীয় স্তরে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯95 সালের ১৫ই আগস্ট। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি. নরসিমা রাওয়ের সরকার ‘প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয় পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি’ (National Programme of Nutritional Support to Primary Education – NP-NSPE) নামে এই প্রকল্পটি চালু করে। ইন্টারভিউতে ভারত সরকার কবে এই প্রকল্প শুরু করে জানতে চাইলে এই তারিখটি উল্লেখ করাই শ্রেয়।
৩. সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী নির্দেশ (২০০১)
১৯৯৫ সালে প্রকল্প চালু হলেও অনেক রাজ্যে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। এরপর ২০০১ সালের ২৮শে নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ে জানায় যে, দেশের প্রতিটি রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে শিশুদের বিনামূল্যে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। এই রায়ের পর ২০০২ সাল থেকে দেশজুড়ে প্রকল্পটি কার্যকর হতে শুরু করে।
৪. পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োগ (২০০৩)
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর, পশ্চিমবঙ্গে ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বিদ্যালয়গুলিতে রান্না করা গরম খাবার দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর আগে শুকনো খাবার দেওয়া হলেও, রান্না করা খাবার দেওয়ার সূচনা হয় এই সময় থেকেই।
প্রকল্পের নাম পরিবর্তন ও আধুনিকীকরণ
২০০৭ সালের পরিবর্তন: ২০০৭ সালে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে ‘National Programme of Mid-Day Meal in Schools’ রাখা হয় এবং এর একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা হয়, যেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পিএম পোষণ (PM POSHAN – ২০২১): ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্পের পুনরায় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পিএম পোষণ’ (PM POSHAN – Pradhan Mantri Poshan Shakti Nirman)। বর্তমানে এই প্রকল্পটি এই নামেই পরিচিত। প্রতিটি বিদ্যালয়ে এর নির্দিষ্ট লোগো ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক এবং প্রতিদিনের মেনু, ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি, চালের স্টক ইত্যাদি তথ্য ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শন করতে হয়।
প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরিসংখ্যান
এই প্রকল্পের অর্থায়ন, ছাত্র পিছু বরাদ্দ এবং পুষ্টির মান সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
- অর্থায়ন (Funding): সাধারণ রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দের অনুপাত হলো ৬০:৪০। অর্থাৎ, প্রকল্পের মোট খরচের ৬০% দেয় কেন্দ্র সরকার এবং ৪০% দেয় রাজ্য সরকার। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সম্পূর্ণ খরচ কেন্দ্র সরকার বহন করে।
- বরাদ্দ ও পুষ্টির মান: ছাত্রছাত্রীদের বয়স ও স্তর অনুযায়ী বরাদ্দ এবং ক্যালোরির পরিমাণ ভিন্ন হয়, যা নিচের তালিকায় দেওয়া হলো:
| স্তর | ছাত্র পিছু দৈনিক বরাদ্দ | ন্যূনতম ক্যালোরি | চাল/গম-এর পরিমাণ |
|---|---|---|---|
| প্রাথমিক (Primary) | ₹৬.৭৮ | ৪৫০ ক্যালোরি | ১০০ গ্রাম |
| উচ্চ প্রাথমিক (Upper Primary) | ₹১০.১৭ | ৭০০ ক্যালোরি | ১৫০ গ্রাম |
দ্রষ্টব্য: এই বরাদ্দ কোনো নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়।
দায়িত্ব ও পরিস্থিতিভিত্তিক প্রশ্ন
দায়িত্ব কার?
একটি বিদ্যালয়ে মিড-ডে-মিল প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মূল দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল সহকারী শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর সমান দায়িত্ব ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
রান্না কারা করেন?
এই প্রকল্পের অধীনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতিদিন বিদ্যালয়েই রান্না করা হয়। এই রান্নার কাজ শিক্ষক-শিক্ষিকারা করেন না। এর জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self Help Group) থেকে কর্মীদের নিয়োগ করা হয় এবং তারাই এই দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষক হিসেবে আপনি কি মিড-ডে-মিল খাবেন?
এটি ইন্টারভিউয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীদের খাবার পরিবেশনের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীকে সেই খাবার খেয়ে তার গুণমান পরীক্ষা করতে হয়। এর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি ‘টেস্ট রেজিস্টার’ থাকে, যেখানে খাবার পরীক্ষা করার পর মন্তব্য সহ সই করতে হয়। সুতরাং, উত্তর হবে – “হ্যাঁ, ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার স্বার্থে এবং খাবারের গুণমান নিশ্চিত করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী আমি অবশ্যই মিড-ডে-মিল খেয়ে দেখব।”
