Interview Preparation Tips: যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন করে ইন্টারভিউ। আমরা লিখিত পরীক্ষার জন্য অনেক প্রস্তুতি নিলেও, ইন্টারভিউ পর্বটিকে প্রায়শই অবহেলা করি। আমাদের ধারণা থাকে যে, ইন্টারভিউ বোর্ডে পৌঁছতে পারলেই বুঝি কাজ শেষ। কিন্তু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৯০% প্রার্থী শুধুমাত্র ইন্টারভিউতে সঠিক প্রস্তুতির অভাবে বাদ পড়ে যান। তাই ইন্টারভিউকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং কৌশল। বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য যারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য আজ আমরা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস আলোচনা করব।
ইন্টারভিউয়ে সফল হওয়ার ১০টি মহা মন্ত্র
১. আত্মবিশ্বাস (Self-confidence)
ইন্টারভিউয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো আত্মবিশ্বাস। এটি দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না; এটি অর্জন করতে হয়। আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তখনই আসবে যখন আপনি যে পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই কাজ এবং সংস্থা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা রাখবেন। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি এই পদের জন্য যোগ্য এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য আপনার জানা আছে। এই বিশ্বাসই ইন্টারভিউ কক্ষে আপনার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
২. অনুমতি ও বিনয় (Permission and Politeness)
ইন্টারভিউ রুম একটি ফর্মাল জায়গা। এখানে প্রতিটি কাজের জন্য অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। ঘরে প্রবেশ করা, চেয়ারে বসা, ফাইলপত্র দেখানো, এমনকি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুমতি নিন। আপনার প্রতিটি কথা এবং আচরণে যেন বিনয় প্রকাশ পায়। একজন রুক্ষ মেজাজের মানুষের চেয়ে একজন বিনয়ী প্রার্থীকে সকলেই পছন্দ করেন।
৩. আই কন্টাক্ট (Eye Contact)
ইন্টারভিউয়ারের সাথে কথা বলার সময় সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এটি আপনার সততা এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দেয়। উত্তর দেওয়ার সময় নিচের দিকে বা ছাদের দিকে তাকিয়ে কথা বললে ইন্টারভিউয়ারের সাথে আপনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এটি আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করে। যিনি প্রশ্ন করছেন, তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেওয়াই শ্রেয়।
৪. মুখে হালকা হাসি (A Gentle Smile)
ইন্টারভিউ কক্ষে প্রবেশের সময় এবং কথা বলার সময় মুখে একটি হালকা, স্বাভাবিক হাসি বজায় রাখুন। হাসি আপনার ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দেয় এবং এটি আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। গম্ভীর মুখ আপনার ভয় বা উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, যা একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন (Facial Expression)
কথা বলার সময় আমাদের মুখের অভিব্যক্তি বা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারভিউয়ার শুধু আপনার কথা শোনেন না, আপনাকে দেখেনও। আপনার মুখের অভিব্যক্তি যদি আপনার কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে তা আপনার বক্তব্যকে দুর্বল করে দেয়। তাই আয়নার সামনে কথা বলার অভ্যাস করুন।
৬. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ (Body Language)
আপনার শারীরিক ভাষাও (Body Language) আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়। কথার সাথে শারীরিক ভাষার সামঞ্জস্য থাকা উচিত। রোবটের মতো স্থির হয়ে বসে না থেকে, কথার প্রয়োজনে হাত সামান্য নাড়াচাড়া করা যেতে পারে। এটি আপনার বক্তব্যকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
৭. না জানা প্রশ্নের প্রতি মনোভাব
এটা মনে রাখা দরকার যে, একজন মানুষের পক্ষে সব প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব নয়। তাই যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকে, ঘাবড়ে যাবেন না। বিনীতভাবে বলুন যে উত্তরটি আপনার জানা নেই। একটি বা দুটি প্রশ্নের উত্তর না পারার কারণে ভেঙে পড়লে পরবর্তী জানা প্রশ্নগুলোর উত্তরও আপনি গুলিয়ে ফেলতে পারেন।
৮. হাতের সঠিক ব্যবহার
ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় হাত দুটিকে কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন। হাত মুঠো করে টেবিলের উপর রাখা অহংকার প্রকাশ করে, আবার বেশি নাড়াচাড়া করলে আপনার অস্থিরতা প্রকাশ পায়। হাত দুটি কোলে রাখতে পারেন বা টেবিলের উপর স্বাভাবিকভাবে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে অল্প নাড়াচাড়া করতে পারেন, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়।
৯. সোজা হয়ে বসা (Proper Posture)
চেয়ারে সর্বদা মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। ঝুঁকে বা হেলান দিয়ে বসলে তা আপনার অমনোযোগ এবং নেতিবাচক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। সোজা হয়ে বসলে আপনাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সক্রিয় দেখায়। বাড়িতে প্রতিদিন কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসার অভ্যাস করুন।
১০. পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
যারা আগে ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিন্তু সফল হননি, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন। ভাবুন, আগেরবার কী কী ভুল হয়েছিল? কেন আপনাকে নির্বাচিত করা হয়নি? সেই ভুলগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করুন। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নিলে সাফল্য আসবেই।
